Nov 30, 2011

GIMP দিয়ে স্ক্রিনশট নেয়া

গিম্প / GIMP এর পুরা হল GNU Image Manipulation Program যা অনেকটা ফটোশপের মত। এই দারুন ক্ষমতাবান সফটওয়্যারটি ওপেনসোর্স এবং ফ্রী; তাছাড়া, উইন্ডোজ, লিনাক্স, ম্যাক সব প্লাটফর্ম সাপোর্ট করে। এর আগে গিম্প দিয়ে সাধারণ এনিমেটেড ছবি তৈরী করা দেখিয়েছিলাম। এবার দেখুন গিম্প ব্যবহার করে স্ক্রিনশট নেয়া যায় কিভাবে।
নিচের ছবির মত গিম্পের মেনু থেকে File -->  Create --> Screenshot নির্বাচন করুন। এতে ভেতরে থাকা Screenshot নামক উইন্ডো খুলবে (ছবির মাঝখানে দেখুন)। সেখান থেকে আপনার পছন্দমত স্ক্রিনশট নেয়ার অপশন নির্বাচন করুন। ছবির Area হিসেবে: সিলেক্ট করা উইন্ডো, পুরা স্ক্রিন অথবা স্ক্রিনের নির্দিষ্ট অংশ সিলেক্ট করে স্ক্রিনশট নেয়া যায়।
ব্যক্তিগতভাবে আমি একটু সময় নিয়ে স্ক্রিনশট নিতে পছন্দ করি, তাই Delay হিসেবে কিছু সময় সিলেক্ট করে দেই। এতে ছবি নেয়ার কমান্ড হিসেবে Snap বাটন ক্লিক করার পর এটা মিনিমাইজ করে যা দেখাতে চাই সেগুলো স্ক্রিনে আনার সময় পাওয়া যায়।উপরের ছবিটা চিত্রের মত করে ২য় অপশন সিলেক্ট করে নেয়া হয়েছে, তাই আমার স্ক্রিনের সবকিছুই এতে চলে এসেছে। পরের ছবিগুলো ১ম অপশন দিয়ে নেয়া। এই অপশন নির্বাচন করলে, পরবর্তীতে পছন্দের উইন্ডো (যেটার ছবি নিতে চান) সিলেক্ট করার জন্য + চিহ্নের মত একটা পয়েন্টার আসবে সেটা দিয়ে যেই উইন্ডো ক্লিক করবেন সেটার ছবি নেবে।
স্ক্রিনশট নেয়ার পর ছবিটা গিম্পেই খুলবে। আপনার দরকার হলে এতে কিছু এডিট করতে পারেন। কিছু জিনিষ মার্ক করতে পারেন কিছু জিনিষ ঝাপসা করতে পারেন। যা হোক এরপর ছবিটাকে প্রচলিত ফরম্যাটে সংরক্ষণ করতে চাইলে উপরের File মেনু থেকে Save As নির্বাচন করতে হবে। শুধু Save দিলে গিম্পের ডিফল্ট ফরম্যাট .xcf এ সংরক্ষিত হবে।
Save As দিলে, এতে নিচের মত উইন্ডো খুলবে। সেখানে পছন্দের নাম এবং এক্সটেনশন দিন। কোথায় সংরক্ষণ করবে সেটা দেখিয়ে দিন। খেয়াল করে দেখুন নিচের দিকে Browse for other folders আছে যেটা দিয়ে Save in folder এর সীমিত অপশনের বাইরে যে কোন জায়গা দেখিয়ে দেয়া যাবে। আর এক্সটেনশন হাতে লিখে দেয়ার ব্যাপারে দ্বিধা থাকলে পরের Select File Type এ ক্লিক করে সেখান থেকে পছন্দের ধরণটা বেছে নিতে পারেন। তারপর Save বাটনে ক্লিক করুন।
এই পর্যায়ে নিচের মত মেসেজ আসতে পারে। সেটা জেনে Export এ ক্লিক করুন।
এই পর্যায়ে আপনার ছবির কোয়ালিটি নির্বাচনের জন্য আরেকটি অপশন আসবে।
কোয়ালিটি ১০০% করলে আকার একটু বড় হবে। কোয়ালিটি কমালে ছবির আকার কম হবে। উপরের সবগুলো ছবিই এই চিত্রের মত ৮৫% কোয়ালিটিতে সংরক্ষণ করা। ব্যাস এটাই শেষ ধাপ, Save এ ক্লিক করুন। ছবি সংরক্ষিত হবে।
শুধুমাত্র স্ক্রিনশট নেয়ার জন্য অনেক সফটওয়্যার পাওয়া যায়। যেমন আমার উইন্ডোজ এক্সপিতে এজন্য snagit নামক ফ্রী সফটওয়্যার ব্যবহার করতাম। যদিও কম্পিউটারের Print Screen বাটন এবং পেইন্ট ব্যবহার করেও স্ক্রিনশট নেয়া যায়। উইন্ডোজের পরের ভার্সনগুলোতে সম্ভবত এজন্য নিজস্ব টুল দেয়া আছে (তবে Delay সুবিধা আছে কি না জানিনা)। এছাড়া  লিনাক্সের বেশিরভাগ ডিস্ট্রিবিউশনে স্ক্রিনশট নেয়ার জন্য টুল দেয়া থাকে।
গিম্প ডাউনলোড করতে পারেন এখান থেকে:
উইন্ডোজের জন্য (১৯.৪ মেগাবাইট): http://www.gimp.org/windows/
সরাসরি ডাউনলোড
ম্যাকের জন্য:
http://www.gimp.org/macintosh/
লিনাক্সের জন্য:
http://www.gimp.org/downloads/
বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমে স্ক্রিনশট নেয়ার আরও উপায় জানতে পারেন উইকিপিডিয়া থেকে:‌
http://en.wikipedia.org/wiki/Screenshot
আলাদা সফটওয়্যার ছাড়া উইন্ডোজে স্ক্রিনশট নেয়ার পদ্ধতি বর্ণনা আছে এখানে:
http://www.wikihow.com/Take-a-Screenshot-in-Microsoft-Windows

Nov 20, 2011

শেক্সপীয়ার অ্যান্ড কোম্পানি, কিলোমিটার জিরো, প্যারিস (বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত বইয়ের দোকান)

একখানা টেবিল ঘিরে চলছে জম্পেশ আড্ডা। উপস্থিত আছেন এজরা পাউন্ড, গ্যারট্রুড স্টেইন, হেনরি মিলার, জেমস জয়েস, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, সিনক্লেয়ার লুইস, স্কট ফিটজেরাল্ড, স্যামুয়েল বেকেট, পল ভ্যালেরি। তুমুল হৈ হট্টগোল, করতালির সমাহার। আড্ডার বিষয়বস্তু- সমকালীন সাহিত্য। নিশ্চয়ই ভাবছেন বিশ্বসাহিত্যের এই রথী-মহারথীরা একাট্টা হয়েছেন এমন কোন আড্ডায়! আজ্ঞে না, আমি যে সময়ের ছবি আঁকছি তখন একমাত্র মহামতি স্টেইন আর পাউন্ড বাদে বাকী অন্যদের নাম বিশ্ব তো দূরে থাক পরিবারের বাইরেই কেউ জানত না। তবে এই আড্ডা থেকেই আস্তে আস্তে ক্ষুরধার হতে থাকে তাদের লেখনী, ছড়িয়ে পড়তে থাকে যশ, ছিন্নঝুলি ভরে উঠতে থাকে পুরস্কারের পর পুরস্কারে। সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী হন এখানকার বেশ কজন, কিন্তু সবাই-ই পান একজন লেখকের সবচেয়ে বড় পুরস্কার- পাঠকের অকৃত্রিম ভালবাসা আর লেখনীর অমরত্ব। আড্ডার স্থান- শেক্সপীয়ার অ্যান্ড কোম্পানি, এক জীর্ণ পুরনো বইয়ের দোকান, কিলোমিটার জিরো প্যারিস।
shakesand-co
শেক্সপীয়ার অ্যান্ড কোম্পানিকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত বইয়ের দোকান, নোতরদাম গির্জা থেকে এক মিনিটের হাঁটা দূরত্বে সীন নদীর পাড়ে অবস্থিত, ফরাসী দেশে ইংরেজি ও আন্তর্জাতিকতার ঝান্ডা ওড়ানো এই একপৌরে দোকানটিকেই ধরা হয় মহানগরী প্যারিসের কেন্দ্রবিন্দু, যার জন্যই এর অবস্থানকে বলে কিলোমিটার জিরো! যেদিন থেকেই জেনেছি এই অসাধারণ ঐতিহাসিক স্থানটির কথা, মনের গহনে সুতীব্র ইচ্ছা জেগেছে মাদার অফ লিটারেচার বা সাহিত্য জননী খ্যাত সিলভিয়া বীচ হুইটম্যানের প্রতিষ্ঠিত এই সাহিত্য তীর্থ পরিদর্শনের। ১৯১৯ সালে যাত্রা শুরুর পর এখানে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য কিংবদন্তীর। খুব দ্রুত বই বেচার দোকান থেকে বিনে পয়সায় বই ধার দেবার ও কফিপানের জনপ্রিয় আসরে পরিণত হয় তা, আসতে থাকেন বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে তরুণ লেখকেরা যাদের মনে সোনালী স্বপ্ন লেখক হবার, দিবা রাত্রি লিখে যাচ্ছেন নতুন স্বাদের সাহিত্য কিন্তু প্রকাশকদের কাছে হালে পানি পান না একেবারেই নবিশ বলে, তাদের দল ভারী হতে থাকে দিনে দিনে।
সাহিত্যচর্চার বাসনা নিয়ে ইতালি যাচ্ছিলেন সাবেক আমেরিকান সৈন্য আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, পথে এক শুভাকাঙ্ক্ষীর পরামর্শে প্যারিসে এসে আস্তানা গাড়েন। ক্লায় ক্লেশে কেরানীগিরি করে জীবন চালাচ্ছিলেন জেমস জয়েস, বিশাল বই ইউলিসিস লেখা প্রায় শেষ, কিন্তু ছাপাতে রাজি হচ্ছে না কেউ, এগিয়ে এলেন সিলভিয়া বীচ হুইটম্যান, এগিয়ে এল শেক্সপীয়ার অ্যান্ড কোম্পানি। আর এখন সবারই জানা গত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ উপন্যাস হবার অতি দুর্লভ সন্মান অর্জন করেছে ইউলিসিস।
নতুন নতুন লেখকদের আড্ডা জমছে সমানে, তাদের বাউন্ডুলেপনা দেখে তৎকালীন বিশ্বের অন্যতম সেরা লেখিকা গ্যারট্রুড স্টেইন হেমিংওয়ে ও তার বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলে উঠেছিলেন – You are a Lost Generation! সোজা বাংলায় গোল্লায় যাওয়া প্রজন্ম। অথচ তারাই পরবর্তীতে আবির্ভূত হলেন একেকজন বিশ্বসাহিত্যের দিকপাল হিসেবে, মূল কারণ- শেক্সপীয়ার অ্যান্ড কোম্পানির আড্ডা, সাহচর্য, সাহায্য।
স্বপ্নপূরণের দিনে দোকানটিতে প্রবেশের আগে বেশ খানিকক্ষণ দাড়িয়ে রইলাম সাইনবোর্ডের দিকে চেয়ে, সেখানে শেক্সপীয়ারের অঙ্কিত মুখ আর নাম লেখা। দোকানের নামের শেষে কোম্পানির অর্থ বিশ্বের সমস্ত বইপ্রেমী এর অংশীদার, এমনটাই স্বপ্ন দেখতেন সিলভিয়ার পরে দোকানের দায়িত্ব নেওয়া জর্জ হুইটম্যান, যিনি নিজেকে আমেরিকান মহাকবি ওয়াল্ট হুইটম্যানের জারজ পৌপোত্র বলেই পরিচয় দেন দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে।
paris-shakespeare-bookstore-66.3
সামনে কাঠের বাক্সে কিছু বই আর দরজার পাল্লা ঠেলে ভিতরে পা দেওয়া মাত্রই বইয়ের সাম্রাজ্যে পদার্পণ! সব বিষয়ের উপর বই সামর্থ্য মত বিষয়ভিত্তিক সাজানো আছে। এক জায়গায় লেখা পয়েটস কর্নার, পিছনে রাজ্যের যত কবিতার বই।
293
সিঁড়িতে লেখা- মনুষ্যত্বের জন্য বাঁচো।
292
নতুন ও প্রথাবিরোধী সাহিত্যিকদের পাশে বরাবরই বন্ধুর মত দাঁড়িয়েছে শেক্সপীয়ার অ্যান্ড কোম্পানি, দেখলাম বীট জেনারেশনের সমস্ত বই কয়েক তাক জুড়ে থরে থরে সাজানো, তাতে জ্যাক কেরুয়াক, অ্যালেন গীন্সবার্গ, গ্রেগ্ররী করসোর ভিড়।
294
দোকানে আরেক অংশে উচ্ছন্নে যাওয়া প্রজন্ম অর্থাৎ হেমিংওয়ে ও তার সমসাময়িক আড্ডার লেখকদের সাহিত্যকর্মের সম্ভার।
286
প্রচুর ভিড় সেখানে, কিন্তু সবাইকে ক্রেতা ভাবলে ভুল করবেন! অনেকেই এক কোণে বসে পছন্দের বইটি টেনে নিয়ে পড়ে যাচ্ছেন নিবিষ্ট চিত্তে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দোকান যতক্ষণ খোলা আছে ততক্ষণ এই ভাবে বই পড়ার অধিকার আছে সকল পাঠকের! প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রায় নব্বই বছর পার হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত এর বাত্যয় ঘটেনি কোন।
284
আগে দোকানে বড় করে লেখা থাকত TAKE WHAT YOU NEED ,GIVE WHAT YOU CAN , মানে দোকানে বইয়ের নির্দিষ্ট কোন মূল্য ছিল না, এর দাম নির্ভর করত পাঠকের উপরেই! কিন্তু এখন পরিস্থিতি অনেক ভিন্ন, প্রতিটি বইয়ের সাথেই নির্দিষ্ট মূল্যের ট্যাগ, এবং দাম বেশ চড়া, নিশ্চয়ই এই অসাধারণ জায়গাটির ইতিহাসের কারণেই।
যেখানেই বিন্দু পরিমাণ জায়গা ফাঁকা পাওয়া গেছে সেখানেই বইয়ের স্তূপ, সেই সাথে দুর্লভ সব আলোকচিত্র ঝুলছে দেয়ালে আর কিছু পোষ্টার। একেবারে পিছনে গেলে পাওয়া যাবে দোতালায় যাবার কাঠের সিঁড়ি, উপরে জর্জ হুইটম্যানের আস্তানা এবং সেই সাথে পৃথিবীর একমাত্র লেখকদের হোটেল অর্থাৎ বিশ্বের যে কোন প্রান্তের লেখক এখানে এসে বিনামূল্যে রাত্রিযাপন করতে পারবেন! শুনলাম অন্তত ৪০,০০০ লেখক আজ পর্যন্ত থেকে গিয়েছেন এইখানে। অন্তত পারতেন বছর কয় আগেও, এখন দোতালায় করা হয়েছে গ্রন্থাগার আর সাহিত্য বিষয়ক নানা রকমের ওয়ার্কশপ চালানোর স্থান।
287
২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসী অধিক্রান্ত প্যারিসেও জ্ঞানের আলোর জ্বালিয়ে রাখত শেক্সপীয়ার অ্যান্ড কোম্পানি, কিন্তু পরে এক জার্মান ক্যাপ্টেনের হুমকির মুখে আত্নগোপন করেন সিলভিয়া হুইটম্যান, বছর চারেক পরে মিত্রবাহিনীর প্যারিস জয়ের পরে আবার খুলল সেই জ্ঞানের আঁধার, কল্পনা করুনতো মিত্রবাহিনী যখন এই বইয়ের দোকানে প্রবেশ করল তখন তাদের অগ্রভাগে কে ছিল? পুরোদস্তুর সৈনিকের ইউনিফর্ম গায়ে অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে! তার বিখ্যাত স্মৃতিকথা A Movable Feast -এ সেই পুরনো দিনগুলোর কথা অমর হয়ে আছে।
কিন্তু বিশ্বযুদ্ধের পর আগের সেই জায়গার দোকান আর চালু হল না, নিয়ে আসা হল তা সীন নদীর তীরে, যেখানে আমরা এখন দাড়িয়ে।
মন্ত্রমুগ্ধের মত সারা দোকান ঘুরে কিছু বই কেনা হল, সবার আগে ওয়াল্ট হুইটম্যানের লিভস অফ গ্রাস। এবার দাম চুকানোর পালা, কিন্তু সেখানেও রয়েছে এক বিশাল আকর্ষণ, শেক্সপীয়ার অ্যান্ড কোম্পানির বিশেষ সিল, যে কোন বইপ্রেমীর কাছেই এই সিল লাগানো বইয়ের মূল্য অপরিসীম, প্রমাণ হয় বইখানা এসেছে মহা গ্রন্থতীর্থ থেকে, মাঝখানে উইলিয়াম শেক্সপীয়ারের ছাপচিত্র, তার চারপাশে দোকানের নাম, আর লেখা কিলোমিটার জিরো, প্যারিস।
Shakespeare-and-Company-Kilometer-Zero-Paris-stamp-courtesy-Nicholas-Laughlin-at-Flickr-CC-450x337
৯৭ বছরের চিরতরুণ সদাব্যস্ত জর্জ হুইটম্যান বাহিরে থাকায় দেখা করার সৌভাগ্য হল না, আশা রাখি অদূর ভবিষ্যতে নিজের কোন বই প্রকাশিত হলে বুক ঠুকে এসে অন্তত একরাত থাকার অনুমতি চাইব, এই স্বপ্ন বুকে পুষেই বিদায় নিলাম এই যাত্রা।
http://www.sachalayatan.com/node/41127

চলুন জেনে নেই বিশ্বের সবচেয়ে বিষাক্ত ১০টি প্রাণী সম্পর্কে

১.Box Jellyfish

পৃথিবীর সবচে বিষাক্ত প্রাণীর মুকুটটি পরে বসে আছে এই অদ্ভুত সুন্দর প্রানীটি। দেখতে অপরুপ হলেও এটি সাক্ষাত মৃত্যুদুত। এর বিষ পৃথিবীতে সবচে শক্তিশালী। সাধারনত এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার সাগরে এদের দেখা মেলে। সাধারনত গভীর সমুদ্রে থাকলেও মাঝে মাঝে খাবারের সন্ধানে বীচের কাছাকাছি এসে পরে।

তখন মানুষ এদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। এরা বেশিরভাগ সময়ে মানুষের পায়ে আক্রমন করে এদের বিষাক্ত হুল দ্বারা।

এর বিষ মানুষের হার্ট, নার্ভ সিস্টেম এবং স্কিন সেল গুলোকে আক্রমন করে এবং নস্ট করে ফেলে। বক্স জেলি ফিসের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত ব্যাক্তি প্রবলভাবে কাঁপতে থাকে এবং তখন আস্তে আস্তে ডুবে যায় অথবা তীরে পৌঁছানোর পূর্বেই মারা যায়। আর যারা জীবিত থাকে তারা ব্যাথা ও দূর্বলতা নিয়ে বেঁচে থাকে। যদি অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না নেওয়া হয় তাহলে সারভাইভের কোন আশাই থাকে না।

এর বিষের সবচে ভালো প্রতিষেধক হচ্ছে ভিনেগার। বিষক্রিয়ার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে (কমপক্ষে) ভিনেগার দিতে হবে। ভিনেগারে আছে acetic acid যা জেলি ফিসের বিষকে রক্তে মিশে যেতে বাধা প্রদান করে এবং সেই সাথে ব্যথাও উপশম করে।
————————————————————————————————————————–
২. King Cobra

শঙ্খচূড় বা কিং কোবরা, পৃথিবীর সবচে লম্বা বিষাক্ত সাপ, যার দৈর্ঘ্য হতে পারে ৫.৬ মিটার পর্যন্ত মানে প্রায় ১৯ ফিটের কাছাকাছি!! এটি মূলত সম্পূর্ণ দক্ষিণ এশিয়ার বণাঞ্চল জুড়ে দেখা যায়। ইংরেজি নামে কোবরা শব্দটি থাকলেও এটি কোবরা বা গোখরা নয়। এটি সম্পূর্ণ আলাদা গণের একটি সাপ।

এই সাপের আকার পর্যবেক্ষণ এবং ফণার পেছনের অংশ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে গোখরার সাথে এটির পার্থক্য খুব সহজেই নির্ণয় করা সম্ভব। গোখরার তুলনায় শঙ্খচূড় আকৃতিতে যথেষ্ট পরিমাণ বড়।

শঙ্খচূড়ের গণের নাম হচ্ছে Ophiophagus, যার আক্ষরিক অর্থ “সাপ খাদক”, এবং প্রাথমিকভাবে এটি অন্যান্য সাপ ভক্ষণ করেই তার খাদ্য চাহিদা মেটায়। যেসকল সাপ এটি ভক্ষণ করে তার মধ্যে আছে ছোট সাপ, এবং ছোট আকৃতির অজগর। এছাড়াও অন্যান্য বিষধর সাপও এটি ভক্ষণ করে, যেমন: ক্রেইট, গোখরা, এবং নিজ প্রজাতিভুক্ত অন্যান্য ছোট সাপ।

এই সাপের বিষ মূলত নিউরোটক্সিক, অর্থাৎ এটির বিষ আক্রান্ত প্রাণীর স্নায়ুতন্ত্রে আক্রমণ করে। শঙ্খচূড়ের একটি সাধারণ দংশন-ই যেকোনো মানুষকে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট।এর কামড়ের ফলে মৃত্যুর হার প্রায় ৭৫%। বাংলাদেশের সুন্দরবনের গভীরে এই সাপ দেখতে পাওয়া যায়।
———————————————————————————————————————-
৩. Marbled Cone Snail

বিশ্বের সবচেয়ে সেরা ১০ বিষধর প্রাণীর মধ্যে অন্যতম এই মার্বেল কোনা শামুক । এর ইংরেজী নাম marbled cone snail বা Conus marmoreus ।

মাত্র ৬ ইন্চি লম্বা আর ৭-৮ গ্রাম ওজনের এই শামুক নানা রকম সামুদ্রিক কীট-পতঙ্গ ও ছোট মাছ খেয়ে বাঁচে। লোনা পানির সমুদ্রের এই শামুক সর্বোচ্চ ৯০ মিটার গভীর পর্যন্ত যেতে পারে । দেখতে সুন্দর ও ছোট এই শামুকের বিষ এতটাই শক্তিশালী হতে পারে যার এক ফোটা বিষ, যা দিয়ে ২০ জন মানুষকে মারা যায়।

যদিও এই শামুক তার বিষ তাদের শিকার ধরার কাজে ব্যবহার করে। এর দ্বারা মানুষ আক্রান্ত হবার সাথে সাথে অথবা কয়েকদিন পরেও এর লক্ষণ দেখা যায়। যা তীব্র যন্ত্রণা, ফুলে যাওয়া, অনুভূতিহীন এবং ব্যাথায় টন টন করা ইত্যাদি হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় , মাংশপেশির সংকোচন, দৃষ্টিশক্তির পরিবর্তন এবং শ্বাসকষ্ট। এই বিষের কোন প্রতিষেধক নেই।
—————————————————————————————————————————–
৪. Blue-Ringed Octopus

এই ব্লু রিংড অক্টোপাস আকারে অত্যান্ত ছোট, বড়জোর একটা গলফ বলের আকৃতির হয়ে থাকে।

কিন্তু এর বিষকে মোটেও ছোট করে দেখলে হবে না। এটি যে পরিমান বিষ বহন করে সেটি দিয়ে ২৬ জন পুর্নবয়স্ক মানুষকে একমিনিটের মাঝে মেরে ফেলা সম্ভব। এবং এই বিষের কোন প্রতিষেধক নেই।

এটির কামড় যন্ত্রনাহীন হলেও এর মারাত্বক নিউরোটক্সিক বিষ সাথে সাথে কাজ করতে শুরু করে। মাংশপেশীর অসারতা এবং গা গোলানো থেকে এর বিষের লক্ষন শুরু হয় এবং পরিনামে মৃত্যু নিয়ে আসে। জাপান এবং অষ্ট্রেলিয়ার শান্ত সমুদ্রে জোয়ারের সময় এদের দেখতে পাওয়া যায়।
————————————————————————————————————————–
৫. Death Stalker Scorpion

বেশিরভাগ বিচ্ছু মানব জাতির জন্য ক্ষতিকারক নয়, যদিও এদের কামড়ের ফলে স্থানীয়ভাবে সামান্য ব্যথা, অনুভূতিহীন অথবা ফুলে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা যায়।

কিন্তু ডেথ স্টকার নামের বিচ্ছু মারাত্মক ক্ষতিকারক একটি প্রজাতি,  যার বিষ সরাসরি স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমন করে।

এবং এর হুলের বিষ এতটাই শক্তশালী যে, অসহ্য যন্ত্রণা, জ্বর, অচেতনতা, মাংশপেশির প্রবল সংকোচন, অবশ এবং সবশেষে মৃত্যু ঘটায়। উত্তর আফ্রিকা এবং মিডল ইস্টে এই বিচ্ছু পাওয়া যায়।
—————————————————————————————————————————
৬. Stone Fish

হয়তো বা পাথুরে মাছ কোন সুন্দরী প্রতিযোগিতায় জিততে পারবে না, কিন্তু “পৃথিবীর সবচে বিষাক্ত মাছ”-এর খেতাব নিশ্চিত জয় করতে পারবে। এর বিষের বিষক্রিয়া এতটাই তীব্র যে, আক্রান্ত ব্যাক্তি যন্ত্রণাদায় দেহের অঙ্গ কেটে ফেলতে চায়।

সমুদ্রের তলদেশে থাকা নানা রকম পাথরের ভাঁজে নিজেকে নিপুন ভাবে আড়ালে করে রাখার ক্ষেত্রে পারদর্শিতা এবং পাথরের ছদ্মবেশ ধারণ করে সবার চোখকে ফাঁকি দেয়ার প্রবনতার কারণে এই প্রানীটিকে ছদ্মবেশীদের গুরু বলে অনেকেই আখ্যায়িত করে থাকেন।

এই প্রাণীর শরীরে ছড়ানো ছিটানো রয়েছে বিষাক্ত কাঁটা এবং এই বিষাক্ত কাঁটা হাঙ্গর ও অন্যান্য লুন্ঠনকারী,অনিষ্টকারী প্রাণীর হাত থেকে তাকে রক্ষা করে।

এই কাঁটার আঘাতে ভিকটিমের হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা লোপ পায় এবং শরীর দ্রুত নিস্তেজ হয়ে আসে। আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা বিলম্বিত হলে তাকে আর বাঁচানো যায় না। পাথুরে মাছ গ্রীস্মমন্ডলীয় দক্ষিনাংশে বাস করে, কদাচিৎ ভারত মহাসাগর,লোহিত সাগর থেকে কুইন্সল্যান্ড পর্যন্ত  বিশাল শৈল প্রতিবন্ধকের শান্ত অগভীর পানিতে দেখা যায়।
——————————————————————————————————————————-
৭. The Brazilian Wondering Spider

২০০৭ সালের গীনিজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড অনুযায়ী সবচেয়ে বিষধর মাকড়সা যা বেশিরভাগ মানূষের মৃত্যুর কারন।  অন্যান্য মাকড়শার চেয়ে এই মাকড়সা অধিক শক্তিশালী বিষ (একটি ইঁদুর মারতে মাত্র ০.০০৬ মিলিগ্রাম যথেষ্ট) নিয়ে বেঁচে থাকে ।

তাদের আশ্চর্য স্বভাবের কারণে তারা অতি ভয়ংকর।  তারা সাধারণতঃ দিনের বেলায় জনাকীর্ণ এলাকায়, বাসগৃহে, কাপড়ে, জুতোর ভেতরে, গাড়িতে লুকিয়ে থাকে।

এটার বিষে শুধু তীব্র যন্ত্রণাই করে না-কয়েক ঘন্টার জন্য অস্বস্তিকর  লিঙ্গোউথ্বান করে  যা পরবর্তীতে নপুংসকতার দিকে ঠেলে দেয়।
————————————————————————————————————————–
৮. Inland Taipan

“পৃথিবীর সবচে বিষধর সাপ”-এর খেতাব আন্তর্দেশীয় (আভ্যন্তরীন/স্থলভাগের) তাইপে । যার একটা মাত্র ছোবলে ১০০জন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ অথবা ২,৫০,০০০ সংখ্যক একটা বিরাট দলের ইঁদুর নিধন করার জন্য যথেষ্ট।

এর বিষে সধারণ কোবরা থেকে ২০০থেকে ৪০০ ভাগ বেশি পরিমান টক্সিন থাকে যা মাত্র ৪৫ মিনিটের মধ্যে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষকে মারতে সক্ষম।

যদিও এই প্রজাতি সাপ খুবই লাজুক প্রকৃ্তির এবং কোথাও এর দ্বারা সংঘটিত মানুষের প্রাণনাশের মত বিপর্যয়ের কোন রেকর্ড নেই।
———————————————————————————————————————-
৯. Poison Dart Frog
      * নীলাম্বরী ব্যাঙ (Blue poison arrow frog)
মধ্য এবং দক্ষিন আমেরিকার রেইন ফরেষ্ট গুলোতে সুন্দর ও বিভিন্ন রঙের এই ব্যাঙ গুলো দেখতে পাওয়া যায়। পৃথিবীর অন্যতম বিষাক্ত প্রাণিদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দুই ইঞ্চি (৫সেমি) লম্বা এই জাতীয়  ব্যাঙ,যার বিষ ১০ জন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ অথবা ২০,০০০ ইঁদুরকে মারতে সক্ষম।
*কালো কানের ব্যাঙ (Black eared mantilla)
*কালো পেয়ে ব্যাঙ (Black legged dart frog)
                                                     *করোবোরি ব্যাঙ (Corroboree frog)
                                              * স্ট্রবেরি ব্যাঙ (Strawberry poison dart frog)
মাত্র ২ মাইক্রোগ্রাম প্রাণঘাতী বিষ একজন মানুষ বা বৃহৎ কোন স্তন্যপায়ী প্রানির মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট। আমেরিকান রেড ইন্ডিয়ানদের নিয়ে সিনেমায় হয়তো অনেকেই দেখেছেন, তারা বাঁশের মতো চিকন পাইপে ফুঁ দিয়ে তীর ছুঁড়ে শিকার করে। এই পাইপকে বলে ‘ব্লো পাইপ বা ব্লো গান’ আর তীরটাকে বলে ‘ডার্ট’।
                                                       *রংধনু ব্যাঙ (Dyeing dart frog)
                                                *সোনা রঙা ব্যাঙ (Golden poison frog)
                                             *সবুজ ও কালো ব্যাঙ (Green and black poison dart frog)
                                              *বলিভিয়ান ব্যাঙ (Phantasmal poison frog)
তাদের এই তীরের ডগায় বিষ মাখানো থাকে। আর এই বিষ আসে বিষধর ব্যাঙের পিঠ থেকে। তার জন্যে ব্যাঙ মারতেও হয় না। কেবল সেই বিষধর ব্যাঙের পিঠে ডার্টের মাথাটা ঘষে নিলেই হয়।
                                             * হলুদ ডুরে ব্যাঙ (Yellow banded poison dart frog)
সেই থেকে এই ব্যাঙগুলোর নাম হয়ে গেলো Poison Dart Frog/Poison Arrow Frog।
——————————————————————————————————-
১০. Puffer Fish

পৃথিবীর বিষাক্ত প্রাণিদের মধ্যে দ্বিতীয় বিষাক্ত মেরুদন্ডি প্রাণি হচ্ছে এই মাছ (প্রথম  dart Fish)। জাপানে এটি ফুগু নামে  এবং কোরিয়ায় (as bok-uh) নামে পরিচিত। বাংলাদেশে এটি পটকা মাছ নামে পরিচিত। এই মাছ উপাদেয় খাবার হিসেবেও বিশেষ পরিচিত।  কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এর চামড়া এবং ভেতরের কিছু অংশ – যা খুবই বিষাক্ত।

এই প্রাণীটি তার অনিষ্টকারীর উপস্থিতি বা বিপদ আঁচ করতে পারলে নিজেকে রক্ষা করার জন্য ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে গ্লোব বা ফুটবল আকার ধারণ করে এবং টেট্রোডক্সিনা যা কিনা সায়ানাইডের চেয়ে ১০০০ গুন  শক্তিশালী এমন বিষাক্ত পদার্থ আক্রমনকারীর উপর নিক্ষেপ করে।

এই মাছের বিষক্রিয়ায় খুব দ্রুত এবং ভয়ংকরভাবে মৃত্যু হয় । আক্রান্ত ব্যক্তি জিহবা ও ঠোটের অসারতা, মাথা ঘোরানো, বমি, মাংশপেশির অবশ হওয়া, শ্বাসকষ্ট  ইত্যাদি উপসর্গ নিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে এবং যার কোন জানা প্রতিষেধক নেই। অনভিজ্ঞ লোকদের দ্বারা ধৃত এবং প্রস্তুতকৃ্ত  fugu থেকে বেশির ভাগ মৃত্যুর কারন ।

পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, ১৯৯৬ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জাপানে প্রতি বছর ২০ থকে ৪৪ জন  fugu বিষক্রিয়ার স্বীকার হয়েছে এবং তন্মধ্যে ৬ জনের বেশি মৃত্যু হয়েছে। আর বাংলাদেশে পেপার খুললেই তো দেখা যায় পটকা মাছ খেয়ে অমুক পরিবারের অত জনের মৃত্যু। fugu বিষক্রিয়ায় তাৎক্ষনিক  মৃত্যু হবার কারণে, জাপানে একমাত্র লাইসেন্সধারী রাধুনী(chefs)’দেরকে এটা প্রস্তুতের অনুমতি দেয়া হয়েছে ।